মাহমুদুল হাসান (শুভ)(কাজিপুর) সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার যমুনা শিকস্তি মাইজবাড়ী ইউনিয়নের একটি গ্রাম । নাম ছালাভরা। গ্রামটি এখন দেশের ১৫/১৬ জেলার মানুষের নিকট “ফার্নিচার গ্রাম” নামে পরিচিত।
গ্রামের মানুষের কর্মের পরিচয়েই গ্রামের নামের এই নতুন পরিচিতি। কাঠ কাটা থেকে আসবাব বাজারজাত করা পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে এই গ্রামের অল্প শিক্ষিত বা স্বশিক্ষিত আশি শতাংশ মানুষ কাজ করেন। কেউ করাতকল থেকে চাহিদামতো কাঠ কেটে আনেন, কেউ মূল কাঠামো তৈরি করেন, কেউবা তাতে বাহারি নকশা আঁকেন। মূল কাঠামো ঘষে-মেজে রং-বার্নিশ করে সম্পূর্ণ বিক্রির উপযোগী করে তোলেন অন্য কেউ। প্রায় তিন যুগ ধরে কাঠের আসবাব তৈরির কাজই এই গ্রামের মানুষের প্রধান জীবিকা ।
ছালাভরা গ্রামের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্বে বিচ্ছিন্নভাবে যে যার মতো করে বাড়িতে আসবাবপত্র তৈরি করতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে চাহিদা বাড়ায় সাত বছর যাবৎ গ্রামের বাসিন্দারা রাস্তার ধারের জমিতে নিজেদের প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন ছোট-বড় দুই শতাধিক কারখানা।
যেখানে তৈরি হয় আলমারি, শোকেস, ড্রেসিং টেবিল, খাট, পড়ার টেবিল, আলনা, চৌকি, সোফাসেটসহ নানা রকমের আসবাব। সাশ্রয়ী মূল্যে এসব আসবাব কিনতে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের অন্তত ১৫ থেকে ১৬ টি জেলার পাইকারেরা এখানে আসেন। অনেকে এখন মোবাইল ফোনে অর্ডার দেন।
প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার আসবাব এখানে বিক্রি হয়। এছাড়া এই গ্রামের কিছু ব্যবসায়ী তাদের তৈরি আসবাবপত্র নিয়ে রূপসা, নলিন, নাটুয়ারপাড়া, রতনকান্দি, সরিষাবাড়ি, মাদারগঞ্জ, ভূয়াপুর হাটে বিক্রি করেন। নৌকা বোঝাই দিয়ে এসব আসবাব ওইসব হাটে নিয়ে যান তারা।
সরেজিমন গ্রামটিতে গিয়ে বিভিন্ন কারখানায় মানুষের কর্মযজ্ঞ দেখা গেছে। জানা যায়, সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা মূল্যের আসবাব তৈরি হয় কারখানাগুলোয়। আসবাব তৈরিতে কাঠের জোগান আসে টাঙ্গাইল, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও ময়মনসিংহের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে।
কারখানাগুলোয় অন্তত ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও কাঠের সামগ্রীর কারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে।
ছালাভরা গ্রামের প্রথম দিককার কারখানার একটি ‘শরিফ ফার্নিচার’। এই কারখানার মালিক শরিফুল ইসলাম ২০ বছর আগে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে এ কাজ শুরু করেন। এখন তাঁর অধীনে ৫০-৬০ জন শ্রমিক কাজ করে।
আরওপড়ুন …
শিমুলদাইড়- ঢেকুরিয়া রাস্তার পাশের ‘হারুন কাঠ ফার্নিচার’ এর মালিক হারুন বলেন, আমাগোরে চালান ( মূলধন) কম। সরকার যদি লোনের ব্যবস্থা করে তো ব্যবসা বড় করা যাবে।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব বলেন, ইতোমধ্যেই বেশকিছু মালিক আসবাব তৈরির কারখানার প্রসারে ক্ষুদ্রঋণ পেয়েছেন। কাজিপুরে কর্মসংস্থান ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের শাখা রয়েছে। তারা ইচ্ছে করলে সেখান থেকেও ঋণ নিতে পারবেন।
Subscribe to get the latest posts sent to your email.