চোরাচালানির বদলে ডিমলার ভারতীয় সীমান্ত এখন মানবপাচ হটস্পট
বাদশা প্রামানিক নীলফামারী প্রতিনিধি
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে রেড এলার্ট জারি করেছে। অবৈধ পথে সীমান্ত পারাপারে কোথাও কোথাও প্রাণহানির মত ঘটনাও ঘটছে। ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের পর থেকে সারা দেশেরু মতো নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সীমান্তে কয়েকগুণ সতর্কতা বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ রংপুর ব্যাটেলিয়ন (৫১ বিজিবি)। সীমান্তে তৎপরতা বাড়ানোর পর জানা যায়, চোরাকারবারিরা তাদের পাচারের টার্গেট বদলেছে। আগে গরু, মাদকসহ অন্যান্য পাচারে জড়িতদের একটি চক্র এখন মানবপাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারি আমলা, বিশেষ ব্যক্তি ও জেল থেকেি পলাতক সাজাপ্রাপ্ত দাগি আসামিরা মানবপাচারের এই হটস্পট পথে ভারতে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন। বিজিবি বলছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অপরাধী চক্রটিিু মানবপাচারে সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে ধারণা তাদের। এ কারণে ২৫ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা জুড়ে গোয়েন্দা তৎপরতা ও টহল জোরদার করা হয়েছে।
সীমান্তবর্তী একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখরিবাড়ি, টেপাখরিবাড়ি ইউনিয়নের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকার পশ্চিম ছাতনাই গ্রামের মোজাম্মেল হক পিতা মহি উদ্দিন, একই গ্রামের আব্দুর রশিদ পিতা তবিউদ্দিন, ঠাকুরগঞ্জ গ্রামের আব্দুল করিম পিতা আব্দুল জব্বার, দ্বারাজগঞ্জ গ্রামের স্বপন মিয়া পিতা মোজাম্মেল হক, একই এলাকার শফিকুল ইসলাম পিতা মনছুর আলী ও পশ্চিম ছাতনাই গ্রামের সাইফুল ইসলাম পিতা তরু মাহমুদসহ এলাকার কিছু উঠতি বয়সী তরুণ চোরাকারবারিরা মানবপাচারের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এই সব রুট দিয়ে মোটা টাকার বিনিময় পাচার হচ্ছে বাংলাদেশের নারী-পুরুষসহ নানা বয়সের মানুষ।
ইতিপূর্বে গত ৪ অক্টোবর দিনাজপুরের খানসামা থানার খামাতপাড়া গ্রামের প্রমোদ চন্দ্র রায়ের ছেলে খনিজ চন্দ্র রায় (২৬), বিমল চন্দ্র রায়ের ছেলে ছন্দ চন্দ্র রায় (২১) ও কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের ছেলে রঞ্জিত চন্দ্র রায় (২১)-কে আটক করে কালিগঞ্জ সীমান্ত বিওপি ক্যাম্প। রংপুর ব্যাটালিয়ন (৫১ বিজিবি)। এরপর ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার ডিমলা সদর ইউনিয়নের বাবুরহাট মেডিকেল মোড় এলাকার শম্ভু দত্ত মল্লিকের ছেলে আনন্দ দত্ত মল্লিক (২৬), নীলফামারী সদর ইউনিয়নের চাওড়া সবুজ পাড়া গ্রামের সুরেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে হেমন্ত রায় (২১), কিসামত বসিয়ান পাড়ার ডালিম চন্দ্র রায়ের ছেলে শংকর রায় (১৮) ও পলাশবাড়ি মধ্যপাড়া গ্রামের ললিত চন্দ্র রায়ের ছেলে উত্তম কুমার রায় (১৯)-কে আটক করে ঠাকুরগঞ্জ বিওপি ক্যাম্প। রংপুর ব্যাটেলিয়ন (৫১ বিজিবি) টহল দল।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক খোরশেদ আলম বলেন, হাসিনা সরকার পতনের পর দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও অল্প কিছু সংখ্যক সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয় ঢুকেছে। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এসব মানুষ বৈধ ও অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রমট করতে চাচ্ছেন। পাচারকারীরা এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে। আর হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনৈক নেতা বলেন, দেশে বর্তমানে একটা গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিশ্বস্ত দলীয় জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির কারণে অনেক মানুষ ভরসা পাচ্ছে না। একটা ভীতিকর অবস্থার মধ্যে আছে। ফলে স্থানীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। ভিসা প্রদানে নানাবিধ করাকরি আরোপ করেছে। অনেকেই এ কারণে সীমান্ত পথে অবৈধভাবে দেশত্যাগের চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলে এলাহী বলেন, মানবপাচারের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। তবে সীমান্ত এলাকা যেহেতু বিজিবির নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাই অপরাধ প্রতিরোধ করার দায়িত্বও তাদের।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের রংপুর সেক্টর এর সেক্টর কমান্ডার কর্নেলস মামুনূর-রশীদ বলেন, চোরাচালান ও মানবপাচার প্রতিরোধে বিজিবি’র বিন্দুমাত্র ছাড় নাই। বিজেপি’র প্রধান পাঁচটি কাজের মধ্যে অন্যতম হলো মানব পাচার প্রতিরোধ করা। আর সেটা শিশু হোক, বয়স্ক হোক, মহিলা হোক মানব পাচারে কোন ছাড় নাই। সীমন্ত এলাকায় আমরা ২৪ ঘন্টা সোচ্চার আছি। আমাদের টহল সীমান্ত এলাকায় সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। মানব পাচার প্রতিরোধে আমাদের যা যা করণীয় দরকার আমরা তা করব। বিজিবি সীমান্ত রক্ষায় সব সময় সোচ্চার আছে। আগেও ছিলাম, বর্তমানেও আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। সীমন্ত রক্ষায়ই আমাদের প্রধান কাজ। মানব পাচারে যারা জড়িত তাদেরকে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দিবো না। অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।