ছাতিয়াইনের ‘মাটিখেকো’ সাহেদ আলীকে রুখবে কে?
মাধবপুরে নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে ফসলি জমি খনন করে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়নের দাশপাড়া কৃষিজমি থেকে বালু মাটি তুলছেন প্রভাবশালী সাহেদ আলী নামের এক ব্যক্তি। উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তিনি মাটি তুলছেন বলে দাবি তাঁর।
জানা যায়, দিনরাত অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করায় কৃষকের ফসলি জমি পুকুরে পরিণত হচ্ছে। ফলে অসহায় হয়ে পড়েছে ওই এলাকার কৃষকরা। খননযন্ত্রের মাধ্যমে তোলা সেই মাটি দীর্ঘ পাইপলাইনের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে ইনোভেটিভ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানে। যা বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও নীরব রয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি জানেন এবং কিছুদিন আগে বন্ধ ও করেছিলেন। এরপর গোপন দেনদরবার করে আবার তা চালু হয়েছে-এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকের জমি পুকুর খননের নামে সেলু মেশিন ও ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলন করে দীর্ঘ পাইপলাইনে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ইনোভেটিভ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানে ফেলা হচ্ছে। অল্প দামে বালু মাটি কিনে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সাহেদ আলী বিগত কয়েক বছর ধরে কম দামে মাটি বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে থাকেন। এর ফলে আমরা বাড়িঘর, ফসলি জমি হারাতে বসেছি। এর কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার কয়েক দিন আগে বন্ধ করে গেছে। এরপর গোপন দেনদরবারের মাধ্যমে তা আবার চালু হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলেই সাহেদ আলী ও তার লোকজন বলেন প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বালু মাটি তুলছি। আপনারা চিল্লাইয়ে কোনো কাজ হবে না।’
এলাকাবাসী আরও বলেন, ইউএনও স্যার মাঝে মাঝে আসেন, দেখেন, বন্ধও করে চলেন যান। আবার আগেই মতো চলে।’ ‘স্যারের যাওয়া-আসার মধ্যেই হয়তো কোনো কিন্তু আছে। তা ছাড়া অবৈধ কাজ চলে কী করে?’
সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার নিরীহ কৃষকের জমির মাটি কেটে নিয়ে পুকুরে পরিণত করছেন উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলীর ছেলে সাহেদ আলী। ড্রেজার মেশিন ও প্রকল্পের আশপাশে ঘেরাও করে বসে আছে সাহেদ আলীর সাঙ্গপাঙ্গরা। তারা লাঠিসোটা নিয়ে আড্ডা দেন। কেউ প্রতিবাদ করলেই নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এর সত্যতা যাচাইয়ে নোভেটিভ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের পাশে গেলে কয়েকজন যুবক এসে প্রতিবেদককে ভিডিও ছবি না করার জন্য বাঁধা প্রদান করেন।
সোহাগ মিয়া নামে এক যুবক বলেন, সাহেদ আলী নিষেধ করেছন ওই এলাকার আশেপাশে কোন ছবি বা ভিডিও না করার জন্য। করলে মোবাইল ক্যামেরা রেখে দেয়া হবে। প্রকল্পের আশপাশে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
সোহাগ মিয়াসহ এই কর্মযজ্ঞের চারপাশে পাহারায় নিয়োজিত আছেন আরো সাত থেকে আটজন। তাদের জিজ্ঞেস করলে বলেন, আমরা কয়েকজন এটি দেখভাল করি। কেউ ছবি ভিডিও তুলতে এলে বাঁধা দেই। সাংবাদিক পরিচয় পেলে সাহেদ আলীকে খবর দিলে তিনি এসে তাদের আপ্যায়ন করেন এবং খরচাপাতি দিয়ে শেষ করেন।
এ বিষয়ে কথা হয় অভিযুক্ত সাহেদ আলীর সঙ্গে। প্রথমে অস্বিকার করলেও পরে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি তুলি, আপনারা পত্রিকায় লিখেও কিছু করতে পারবেন না।’
ছাতিয়াইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী কাসেদ বলেন, অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের দায়ে ইউএনও স্যার বন্ধ করে গেছেন। কিন্তু কিভাবে আবার চালু হলো তা আমি জানি না। সাহেদ আলী সম্পুর্ণ অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করছে।
ইউপি সদস্য সুবোধ বলেন, আমার জানামতে আলী মিয়ার জমি থেকে সাহেদ আলী মাটি কিনে কোম্পানীতে বিক্রি করছেন। ময়মনসিংহ থেকে ডেজার মেশিন এনে প্রায় ১মাস যাবৎ এই মাটি তুলছেন। কিছুদিন আগে ইউএনও স্যার এসে বন্ধ করে আমাকে দায়িত্ব দিছেন কিন্তু এখন কিভাবে মাটি উত্তোলন করছে তা আমি জানি না।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.কে.এম ফয়সাল জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মামলাসহ সাহেদ আলীকে জরিমানা করা হয়েছে। কিছুদিন আগে ড্রেজার মেশিন জব্দ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুবোধ এর জিম্মায় দিয়ে আসছিলাম। এখন যদি ইউপি সদস্য আইন অমান্য করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কৃষি জমি অকৃষি কাজে ব্যবহার ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন মানা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ইনোভেটিভ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পক্ষে এখন পর্যন্ত কেউ কোন আবেদন করেনি। এবিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
Subscribe to get the latest posts sent to your email.