বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার অস্তিত্ব আজ বিপন্ন।
মোঃ বাদশা প্রামানিক নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকের অংশ শাপলা ফুল। মাত্র ১৫ থেকে ২০ বছর আগে বর্ষায় খাল বিলের জলে যেখানে সেখানে এই শাপলার দেখা মিলতো। কালের বিবর্তনে ফুলটি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম বইয়ের মধ্যে শাপলা ফুলের অস্তিত্ব খুঁজে পাবে কিন্তু,বাস্তবে এ ফুলের সুবাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাদের কাছে অজানা রয়ে যাবে।
কয়েক বৎসর আগে দেশের জলাশয়ের যেখানে সেখানে এই ফুল দেখা যেত। পানিতে ভাসমান শাপলার সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে কবি, সাহিত্যিক, উপন্যাসিক ও নাট্যকার কত কবিতা উপন্যাস গল্প রচনা করেছে যা সাহিত্যাঙ্গনে অম্লান হয়ে রয়েছে।এক সময় গ্রাম বাংলার ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে জলাশয় থেকে এই ফুল সংগ্রহ করে কান্ড দিয়ে মালা গেঁথে গলায় পড়তো। আজ সেই দৃশ্য শুধু কল্পনায় একা ছবির মত।
শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম নিউকিয়াসিস। এটি নিউফাইলিশ বর্গের অন্তর্ভুক্ত। নিউ ফাইলেস বর্গের সকল উদ্ভিদকে বাংলায় শাপলা বলা হয়। শাপলার আদি নিবাঁস আফ্রিকায়। ধারণা করা হয় যে মিশরের নীল নদের ধারে এটিকে প্রথম দেখতে পাওয়া যায়। বসন্তের শেষ থেকে শরৎ এর প্রথম পর্যন্ত ফুলটি ফুটে থাকলেও বর্ষাকালে বেশি ফুটে।
শাপলা প্রাচীন যুগ থেকে খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। মিশোর, চীন,জাপান ও এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় শাপলার কান্ড সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। পূর্ণ বিকশিত ফুলের গর্ভে সরিষার দানার মতো বীঁজ থাকে।বাংলাদেশের মানুষকে এই বীঁজ খেতে দেখা যায়। এ বীোজ থেকে এক ধরনের খই তৈরি হয়, যাকে বলা হয় ঢ্যাপের খই। ঢ্যাপের খই ছিল গ্রাম বাংলার মানুষের পছন্দের খাবারের একটি। শাপলার পুষ্টিগুণ অনেক।এতে হয়েছে ক্যালসিয়াম, শাপলা তে থাকা গ্যালিড এসিড এনজাইম যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।শাপলা ফুল ইনসুলিনের স্তর স্থিতিশীল রেখে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। শাপলা শরীরকে শীতল রেখে হৃদ যন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং পিপাঁসা দূর করে।
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ।এদেশের প্রায় সব অঞ্চলে নদীদ-নালা,হাওর-বাওর খাল-বিল,ডোবা-দিঘী,রয়েছে। এসব জলাশয়ের প্রচুর পরিমাণ শাপলা ফুল দেখা যায়। এ ফুলের কাণ্ড পানির নিচে থাকে। পাতাও ফুল জলাশয় এর উপরে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এটি একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। পৃথিবীতে প্রায় ১০০ প্রজাতির শাপলা ফুল থাকলেও বাংলাদেশে মাত্র তিন ধরনের ফুল দেখা যায়। লাল,বেগুনি ও সাদা।সাদা রঙের শাপলাকে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে ধরা হয়। সাদা রং দেশের সাধারণ মানুষের মনের শান্তি ও পবিত্রতার এবং একই বৃন্তে আবৃত পাপড়ি গুলো ঐক্যবদ্ধের প্রতীক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশের টাকা,পয়সা, স্ট্যাম ও বিভিন্ন মূল্যবান কাগজে শাপলার জলছাব রয়েছে।কিন্তু, বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং জলাশয় কমে যাওয়ায় এই শাপলা ফুল দিনে দিনে দুর্লভ হয়ে উঠেছে। যেহেতু ফুল চাষ বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শাপলা ফুল চাষে দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে এটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ মীর হাসান আলী (বন্না)এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,যদিও সরকারিভাবে এরকম কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তারপরও আমাদের সবাইরে উচিত আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা কে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসা।
তাংঃ১৫/১১/২৪ইং
মোঃ বাদশা প্রামানিক
মোবাঃ ০১৭১৭৮১৭২৬৬