ক্রাইমসিন নিউজ ডেক্স :
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী -ধর্মঘর সড়কের পাশে চৌমুহনী বাজারে প্রতিষ্ঠিত চৌমুহনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে রয়েছে।
১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টির সীমানা প্রাচীর(বাউন্ডারী) নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ১২ লক্ষ ৩৩ হাজার ৩২২ পিডিবি-৪ প্রকল্প থেকে বরাদ্দ হয় গত ১৪জুন ২০২৩ সালে । মেসার্স রনি ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২৮ আগষ্ট ২০২৩ সালে কাজের টেন্ডার লাভ করে। ভূমি সীমানা জটিলতার কারণে সীমানা প্রাচীর নির্মানের টাকা ফেরত যাওয়ার পথে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর পূর্বেও একই জটিলতায় একাধিকবার বিদ্যালয়টির সীমানা প্রাচীর নিমার্ণের বরাদ্দের টাকা ফেরত গিয়েছে বলে জানা যায়।
চৌমুহনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহি উদ্দিন জানান,১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে স্কুলটি এখানে খাস খতিয়ানভুক্ত জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত ভূমি জরিপে স্কুলটির নামে আলাবক্সপুর মৌজার ৩৪০,৩৪১ ও ৩৪২ দাগে ৩০ শতাংশ জমি পর্চা(মাঠ জরিপ) হয়েছে। বিদ্যালয়ের নিজস্ব নামে কোনো জায়গা নেই।
বর্তমানে এখানে বিদ্যালয়ের মাঠে ৩য় তলা ভবন নির্মান কাজ চলছে। এই ভবন বরাদ্দ পাওয়ার পর আমি গত ১৯ অক্টোবর ২০২২ সালে ৩০ শতক ভূমি পুনরুদ্ধার করে সীমানা চিহিৃত করার জন্যে মাধবপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করি। স্থানীয় সার্ভেয়ার দ্বারা পরিমাপ করে এই দাগে বিদ্যালয়ের নামে পর্চাকৃত ৩০ শতক ভূমি পাওয়া যায়নি।
আরওপড়ুন ….
স্থানীয় সার্ভেয়ারের পরিমাপে দেখা যায় বিদ্যালয়ের পিছনে স্থানীয়দের দখলে বিদ্যালয়ের জায়গা রয়েছে। স্থানীয় দখলদাররা বিদ্যালয়ের জায়গাতে দোকান ঘর নির্মান করে রেখেছে। বিদ্যালয়টির সীমানা প্রাচীর(ভাউন্ডারীর)নির্মান এর জন্যে বরাদ্দ পাওয়ার পর আমি আবার গত ২৮ আগষ্ট ২০২৩ সালে সহকারী কমিশনার(ভূমি)মাধবপুরের বরাবর বিদ্যালয়টির ভূমি সীমানা চিহিৃত করে দেওয়ার জন্যে আবেদন করি। আজ পর্যন্ত ওনারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। সীমানা প্রাচীর (ভাউন্ডারী) নির্মানের জন্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান একাধিক বার এসেছে আমরা তাদের বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণ করে দিতে পারিনি। এখানে শিশুদের নিরাপাত্তায় সীমানা প্রাচীর অতি জরুরী। কারন প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের সামনে সাপ্তাহিক হাঁট বসে।
প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে মাধবপুর শিক্ষা অফিস বিদ্যালয়টির সীমানা প্রাচীরের প্রস্তাব পাঠায়। একাধিকবার যথারীতি প্রস্তাবটি পাস হয়ে সীমানা প্রাচীরের জন্য বরাদ্দও আসে কিন্তু জমির মালিকানা নিয়ে পার্শ্ববর্তী জমির মালিকদের সঙ্গে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় সে বরাদ্দ ফেরত গেছে। কয়েক দফা চেষ্টা করেও সীমানা প্রাচীরের কাজ করাতে পারেননি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এ ব্যাপারে চৌমুহনী ইউ/পি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সোহাগ জানান,সীমানা নির্ধারনের জন্যে আমি একাধিকবার উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় কথা বলেছি। শুধু বিদ্যালয়ের জমি না সরকারী খাস খতিয়ানভুক্ত জমির সীমানা নির্ধারন করার জন্যে দাবি করছি । চৌমুহনী-ধর্মঘর সড়কের পাশে চৌমুহনী বাজারের মধ্যখানে চৌমুহনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান এটি উন্মুক্ত থাকায় শিশুরা চরম ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বিশেষ করে ছুটির সময় শিশুরা দল বেঁধে দৌড়ে সড়কের মধ্যে চলে যায়।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এম জাকিরুল হাসান জানান,সীমানা জটিলতার কারণে চলতি অর্থবছরে এই বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মান না হলে টাকা ফেরত চলে যাবে। আমরা উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সীমানা প্রাচীরটা নির্মান করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান,সীমানা জটিলতার কারণে বিদ্যালয়টির নিরাপত্তা দেয়াল নির্মাণ(বাউন্ডারী) এর কাজ করতে পারছে না ঠিকাদার। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ না হলে বরাদ্দের টাকা ফেরত চলে যাবে। বিষয়টি দুঃখজনক। এ বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্নিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা দরকার।
সহকারী কমিশনার(ভূমি) রাহাত বিন কুতুব জানান,বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আমরা দেখছি। জমিটি জেলা প্রশাসক নামীয় ১নং খাস খতিয়ান ভুক্ত। বিদ্যালয়ের নামে কোন রের্কডভুক্ত ভূমি নেই। যেহেতু বিদ্যালয়ের নামে রেকর্ড নেই এবং খাস খতিয়ান ভুক্ত জমি বিধায় বিদ্যালয়কে সীমানা নির্ধারণ করে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার বিধি মোতাবেক কোন সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে সার্ভেয়ার ও স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাসহ এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টজনদের কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের নামে যেন জমি বন্দোবস্ত পাওয়া যায় সে জন্যে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করার।
মাধবপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা এ ,কে,এম ফয়সাল জানান,বিষয়টি আমি গুরুত্বসহকারে দেখছি ,জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে এই বিষয় কথা হয়েছে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টজনদের কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের নামে জমি বন্দোবস্তের জন্যে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করার।