হবিগঞ্জের মাধবপুরে আল্পনা বেগম (৪৫) নামে এক মধ্য বয়সী নারীকে চোর সন্দেহে আটক করে একটি সাদা কাগজে ‘মহিলা চোর’ লিখে তার ছবি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিসিয়াল ফেইসবুক আইডি,
‘মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মাধবপুর ‘থেকে পোস্ট করে ভাইরাল করে দিয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এতে এলাকায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। সাদা কাগজে মহিলার নাম ও ঠিকানা বি-বাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা গ্রাম উল্লেখ্য করা হয়েছে।,
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে জানাযায়, গত মঙ্গলবার (৯ মে) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌরসভার কৃষ্ণনগর গ্রামের এক মহিলা চিকিৎসা নিতে আসেন। পরে তার গলায় থাকা স্বর্নের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়
অভিযুক্ত মহিলাকে হাতে নাতে ধরে ফেলেছে এমন অভিযোগ তুলে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে।পরে মহিলার শোরগোল শুনে আশেপাশের মানুষ জড়ো হয়ে চোর সন্দেহে অভিযুক্ত আল্পনা বেগমকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তার কক্ষে আটক করে।,
পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ওই মহিলাকে চোর অভিযুক্ত করে বড় করে ”মহিলা চোর” ও ঠিকানা সংবলিত একটি সাদা কাগজ লিখে হাতে ধরিয়ে ও ভিডিও চিত্র ধারন করে ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাধবপুর’ নামক অফিসিয়াল ফেইসবুক আইডি থেকে পোস্ট করে দেয়।,
পরে মূহুর্তেই ওই পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়। আপলোড করা ভিডিওতে দেখা যায়, ওই মহিলা উত্তেজিত নারী পুরুষদের তোপের মুখে পড়েছেন। তিনি বার বার আল্লাহ আল্লাহ ডাকছেন এবং কয়েকজন পুরুষ তাকে গালিগালাজ করছে এবং বিভিন্নভাবে হেনস্তা করছে।,
এছাড়াও ওই নারীকে মাথায় হাত দিয়ে কাঁদতেও দেখা গেছে ছবিতে। চোর সন্দেহ করে একজন মহিলাকে এমন নির্মমভাবে হেনস্তা করায় এলাকায় উঠেছে নিন্দার ঝড়।
বিভিন্ন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগন জানান,যদি ওই মহিলা চোর হয়ে থাকে বা অপরাধ করে থাকে তাহলে আইন আছে আইন তাকে সাজা দিবে। কিন্তু এইভাবে একজন মহিলার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে চরম মানবতা লঙ্ঘন করেছে।,
নারী নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী তাহমিনা বেগম গিনি বলেন, একজন মহিলা চুরি করলে তার বিচার হবে। কিন্তু একজন মহিলা চুরি বা ডাকাতি করলেও তাকে পুরুষরা হেনস্তা করতে পারবে না। এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।,
এই বিষয়ে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী এড.সাইফুল ইসলাম সুমন জানান, কোন লোককেই চোর সন্দেহে ধরে তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতে পারে না এইটা আইনের লঙ্ঘন। ওই মহিলা অপরাধ করে থাকলে তার বিচার করবে আদালত।,
আর উনি যেহেতু একজন মহিলা সুতরাং উনার ছবি কোনভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করতে পারে না। এই বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ইশতিয়াক আল মামুন জানান,,
ওই মহিলা যখন ছুড়ি করতে যায় তখন হাতেনাতে ধরা পড়ে তখন উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতেই তার ছবি তুলে ফেইসবুকে দেওয়া হয়েছে।,
একজন মহিলার ছবি এইভাবে ফেইসবুক দিতে পারে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,কেনো দেওয়া যাবে না অবশ্যই দেওয়া যাবে। চুরি করেছে দেখেই তো দেওয়া হয়েছে। অথচ এই ঘটনায় থানায় কোন প্রকার লিখিত অভিযোগ দাখিল করেনি কেউ।,
এই ব্যাপারে মাধবপুর থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চোর সন্দেহে ওই মহিলাকে আটক করে আমাদের কাছে সোপর্দ করা হয় কিন্তু ওই ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ দাখিল না করায়,,
সন্দেহ ভাজন ঘুরাঘুরি করার অভিযোগে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।,