খাবার পানিকে বিশুদ্ধ রাখতে বেশ জনপ্রিয় ছিল মাধবপুরে তৈরি ফিল্টার। এ ফিল্টার শিল্পের জন্য একসময় বিখ্যাত ছিল মাধবপুর। মূলত পাথর, লাইমস্টোন পাউডার, সিমেন্ট, বালি আর মোজাইক মিশ্রণ দিয়ে তিন স্তরবিশিষ্ট ফিল্টার বানাতে গিয়ে দম ফেলার ফুসরত পেতেন না শ্রমিকরা।
পরবর্তী সময়ে এতে টাইলস লাগানো হয়। সারা দেশেই এর চাহিদা বেড়ে যায়। দামে সস্তা, মানে উন্নত বলে বিভিন্ন জেলা থেকে এসে এ ফিল্টার কিনে নিয়ে যেতেন ক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী।
কিন্তু বর্তমানে বিকল্প ফিল্টার এসে যাওয়ায় এর চাহিদায় ভাটা পড়েছে। শ্রমিক সংকট, বিনিয়োগ সংকট, উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি ও তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে মাধবপুরে ফিল্টার শিল্পে নেমে এসেছে দুঃসময়।
মাধবপুর পৌরসভার অমিত ফিল্টারের মালিক পরিতোষ রায় জানান, ১৯৪৭ সালে সর্বপ্রথম হীরালাল রায় এ ফিল্টার আবিষ্কার করেন। খাবার পানিকে বিশুদ্ধ ও ঠাণ্ডা রাখতে বেশ কার্যকর এ বিশেষ ধরনের পানির ফিল্টার, পাথর, লাইমস্টোন পাউডার, সিমেন্ট ও বালি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি।
প্লাস্টিক, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি ফিল্টার এসে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এ কারণে মাধবপুরের ফিল্টার এখন প্রায় উঠে যেতে বসেছে। বাবা-দাদার ঐতিহ্যের পেশা হিসেবে কোনো রকমে এ পেশাকে ধরে রেখেছি।
এ ফিল্টার তৈরিতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী ভিন্ন ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছেন। একদিকে যেমন কমেছে কদর, অন্যদিকে বিলুপ্তির পথে এই ফিল্টার শিল্প।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মাধবপুর উপজেলায় ফিল্টার তৈরির ছোটবড় ২২টি কারখানা এখনো রয়েছে। এসব কারখানায় দুই শতাধিক লোক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ইসলামিয়া ওয়াটার ফিল্টারের খলিল মিয়া জানান, ২০ বছর ধরে তিনি এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
করোনা মহামারির পর থেকে এ শিল্পের কোনো উন্নতি নেই। তার, লোহা, বালি, পাথর, সিমেন্ট ও কাঠের দাম বৃদ্ধির ফলে কোনোরকম চলছে এ শিল্প। শুধু নিজের ও শ্রমিকদের পরিবার পরিজনের কথা চিন্তা করে এ শিল্পকে ধরে রেখেছি।
পপি ওয়াটার ফিল্টারের লিটন বিশ্বাস জানান, এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা খুব কষ্টকর। একদিকে বাজার সংকুচিত হয়ে এসেছে, অন্যদিকে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে বাজারে প্রতিযোগিতাও বেড়ে গেছে।
Subscribe to get the latest posts sent to your email.