মোঃ মেহেদী হাসান মুন্না, রাজশাহীঃ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)’র মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডা. রাজু আহমেদ বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক শিক্ষিকার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া শিশুকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. রাজু আহমেদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুতির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা।
আজ দুপুর ১২টার দিকে প্যারিস রোডে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের তিন শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী চরিত্রহীনের কালো হাত ভেঙে দাও’‘চরিত্রহীন ডাক্তার রাজুর প্রত্যাহার চাই’, ‘যৌন নিপীড়নকারী সামাজিক কীট’ ‘পবিত্র পেশায় নিযুক্ত কুলাঙ্গারকে বয়কট করুন’, ‘ক্যাম্পাসে হয়রানি কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘এক দফা এক দাবি, রাজুর অব্যাহতি’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও স্লোগান দিতে থাকে।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে দেখা করেন। তাঁরা অভিযুক্তের যথাযথ শাস্তির দাবি জানান।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘ভুক্তভোগীর শিশুর পরিবার আমাদের সঙ্গে এসে দেখা করেছেন। আমরা একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তা ছাড়া যেহেতু একটি মামলা করা হয়েছে। মামলাটি রাষ্ট্রীয় আইনি প্রক্রিয়ায় চলমান থাকবে।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘তিনি একই ধরনের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে ঘটাচ্ছেন। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে নারীদের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছিল! যিনি নিজেকে সংযত রাখতে পারেন না; তাঁর শুধু চাকরি না, চিকিৎসার সনদ বাতিল করা দরকার।’ এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোবাররা সিদ্দিকা বলেন, ‘আমাদের একই দাবিতে বারবার রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। আমরা সহকর্মী, শিক্ষক ও নারী হিসেবে কোথাও নিরাপদ নই। এটি অত্যন্ত দুঃখের নাকি লজ্জার বিষয়, কী বলব বুঝতে পারছি না।’ যেহেতু একটি মামলা হয়েছে তাই রাষ্ট্রীয় আইনে আসামিকে অতি দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
এ ছাড়া মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আইন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আলিম, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু, রাজশাহী মহিলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট দিলসেতারা চুনি প্রমুখ।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগীর মা বলেন, চিকিৎসক রাজু আহমেদের সঙ্গে তাঁর (ভুক্তভোগীর মা) এর ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি (অভিযুক্ত চিকিৎসক) তাঁকে বোন বলে ডাকেন। সেই সম্পর্কের জের ধরে তাঁর মেয়েকে তাঁর কাছে নিয়মিত দাঁতের চিকিৎসা করান। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর তালাইমারী এলাকার আমেনা ক্লিনিকের নিচতলায় ওই চিকিৎসকের চেম্বারে তাঁর মেয়েকে চিকিৎসা করাতে যান। পরে রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে ভুক্তভোগীর মায়ের মোবাইল নম্বরে কল আসলে তিনি কথা বলার জন্য চেম্বার থেকে বাইরে বের হন। এমতাবস্থায় ওই চিকিৎসক তাঁর মেয়ের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এতে তাঁর মেয়ে ভয়ে চিৎকার দেয়। এরপর তিনি ভেতরে প্রবেশ করলে তাঁর মেয়েকে কান্নারত অবস্থায় দেখতে পান এবং মেয়ের মুখে ঘটনার বর্ণনা শোনেন। মেয়েকে দাঁতের চিকিৎসার আড়ালে যৌন হয়রানিমূলক হেনস্তা করা নিয়ে আমাদের দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হলে ডাঃ রাজু আমার পা ধরে মাফ চান সেই সাথে তার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে তাকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ করলে মেয়েকে যৌন হয়রানিমূলক হেনস্তা করা মানতে না পেরে পায়ের সেন্ডেল খুলে তাকে মারতে থাকি। পরে তিনি হার্টের অসুখে পড়ে বসে পড়েন। এ ঘটনাকেই তিনি বিকৃত করে হামলা বলছেন। আমি আমার মেয়েকে হয়রানিমূলক হেনস্তা করার বিষয়ে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা করেছি। আমি এমন চরিত্রহীন চিকিৎসক ডা. রাজু আহমেদের গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
এ ব্যাপারে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে আজ সকালে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।