সোহাগ মিয়া, মাধবপুর প্রতিনিধিঃ
মাধবপুর উপজেলার শাহজীবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ভিতর থেকে নিলাম ছাড়া অবৈধ উপায়ে ৬টি গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ৮জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে। ওই অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিলামবিহীন গাছগুলো বিক্রি করে দেয়। আর এসব গাছ বিক্রির টাকা ভাগবাটোয়ারা করতে গিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গেইটম্যান সহ কয়েকজনের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গেইটম্যান সহ কয়েকজন মিলে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের খবর দেওয়ার পর গাছ গুলো জব্দ করেন বন বিভাগ। এ নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ আশপাশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে বৈধভাবে গাছগুলো ক্রয় করেও বিপাকে পড়েছেন উপজেলার বাঘাসুরা ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের মৃত: আজদু মিয়া চৌধুরীর ছেলে মোঃ সোহাদ মিয়া চৌধুরী সোহাদ। বিট অফিসার হুমায়ুন কবীর গাড়িসহ গাছগুলো জব্দ করায় লোকসানে পড়েছেন তিনি। তাছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকেও কোন ধরনের সুরাহা পাননি তিনি। এদিকে তাঁর গাড়িসহ গাছগুলো ছাড়িয়ে দিবে বলেও বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা করছেন ওই কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
ভুক্তভোগী মোঃ সোহাদ মিয়া চৌধুরী সোহাদ নিরুপায় হয়ে গত ১৭জানুয়ারি হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কগ-৬ এর আমল আদালতে শাহজীবাজার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৮জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আসামি করে একটি মামলা দিয়েছেন। মামলার আসামীরা হলেন, শাহজীবাজার বিউবো এর ক্যাশিয়ার মোঃ রায়হান, নির্বাহী প্রকৌশলী এ.কে মফিজ উদ্দিন আহমেদ, সহকারি পরিচালক (নিরাপত্তা) মুনাব্বির হাসান, ইন্সপেক্টর পিডিবি ওমর ফারুক, ভারপ্রাপ্ত সুপার ভাইজার খলিল, নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুর রহমান, মতিন মিয়া ও ফতেহপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা রেনু মিয়া।
মামলায় উল্লেখ করেন তিনি, শাহজীবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ভেতর থেকে ৬টি গাছ ১লাখ ৭০হাজার টাকায় ক্রয় করেন তিনি। গাছগুলো ক্রয় এবং গাছগুলো কেটে বাহিরে নিয়ে আসার জন্য শাহজীবাজার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিমাপ ও নিয়ন্ত্রণ) এর সাক্ষরিত একটি পত্র ও গেইট পাস ও দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তুু গত ১৮ডিসেম্বর তিনি গাছগুলো কেটে বাহিরে নেওয়ার সময় গেইটম্যান গাড়িসহ গাছগুলো আটক করেন। এবং কয়েকজনের সহযোগিতায় তিনি বন বিভাগে খবর দেন। তৎক্ষনাৎ বিট কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর গাড়িসহ গাছগুলো জব্দ করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মোঃ সোহাদ মিয়া চৌধুরী সোহাদ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে গাড়িসহ গাছগুলো ফেরত দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা শুরু করে এমনকি গাছগুলো বিক্রির কথা ও অস্বীকার করেন তাঁরা।
মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, ৬টি গাছের মূল্য নির্ধারণ করে ১লাখ ৭০হাজার টাকায় তার কাছে বৈধভাবে বিক্রি করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওই কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ১ম ঘটনার তারিখ ও সময়ে ১ও৭নং আসামি সোহাদের বাড়িতে গিয়ে গাছের মূল্য বাবদ ১লাক ২০হাজার টাকা আনেন। এসময় ১নং আসামি টাকা বুঝিয়া এবং ১৭ডিসেম্বর গাছগুলো কাটতে বলেন। তাদের কথানুসারে ১৭ই ডিসেম্বর ৮জন শ্রমিক নিয়ে গাছ কাটতে গেলে আসামীরা সহযোগিতা করেন এমনকি কোন কেন আসামি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পিডিবি বিদ্যুৎ লাইন সাটডাউন দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন করেন। এসময় সোহাদ মিয়া চৌধুরী ৮জন শ্রমিকদের মাধ্যমে গাছগুলো কর্তন করেন। ওই দিন দুপুর ১২ঘটিকার দিকে আসামি মতিন ও রেনু তার বাড়িতে গিয়ে আরও ৫০হাজার টাকা নিয়ে আসেন। পরে গাছগুলো গাড়ি ভর্তি করে নিয়ে যাওয়ার সময় গেইটম্যান ও কয়েকজন মিলে বন বিভাগে খবর দিয়ে গাড়িসহ গাছগুলো আটক করান।
মামলার বাদী মোঃ সোহাদ মিয়া চৌধুরী সোহাদ বলেন, “আমি ১লাখ ৭০হাজার টাকা দিয়ে বৈধভাবে গাছগুলো ক্রয় করেছি। সকল ধরনের প্রমাণ আমার কাছে আছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অফিসারের সাক্ষরিত একটি কাগজ আমাকে দেয়া হয়েছে। কিন্তুু বিট অফিসার গাড়িসহ গাছগুলো জব্দ করায় আমার অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এবিষয়ে আমি মামলা করেছি। এছাড়া বিট অফিসার হুমায়ুন কবীর আমাকে ফোন করে স্বাক্ষর দিয়ে গাড়িসহ গাছগুলো নিয়ে আসার জন্য হুমকিও দিচ্ছে। আমি বৈধভাবে গাছ ক্রয় করেছি, চুরি করেনি। তাই স্বাক্ষর দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। মামলায় যে রায় হবে আমি তা মেনে নেবো”।
এদিকে নগদ টাকায় গাছ বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন রেনু মিয়া। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিলাম ছাড়া গাছ বিক্রি করায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বিট কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, অবৈধ ভাবে গাছগুলো বিক্রি হচ্ছিল খবর পেয়ে আমরা গাড়িসহ গাছগুলো জব্দ করেছি। আমি কাউকে ফোন বা হুমকি দেইনি এসব মিথ্যা ও বানোয়াট।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চীফ ইন্জিনিয়ার মিজানুর রহমান বলেন, গাছ কেটে বিক্রি এসব বিষয়ে আমি অবগত নই, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।