
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :
হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এশিয়াটিক কালো প্রজাতির ভালুকের ছবি স্থানীয় এক ফটো ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর এবার এর পার্শ্ববর্তী তেলমাছড়া ও সালটিলা পাহাড়ে বাচ্চাসহ ভালুকের ঘুরাফেরা এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে ।
সাতছড়ির পার্শ্ববর্তী মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর ও জগদীশপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ তেলমাছড়ার রসুলপুর ও সালটিলা বনাঞ্চলের সীমান্ত এলাকায় ৩টি বাচ্চাসহ ঘুরতে দেখা যাচ্ছে।প্রসঙ্গত,মাধবপুরে তেলমাছড়া বনটি প্রায় ১৭০০ একরের একটি বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম।স্থানীয় ওই বনের পাহাড়ীরা লাকড়ি বা কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক ভালুকের চলাফেরা প্রত্যক্ষ করেছেন। ভালুকের সাথে বাচ্চা থাকলে এরা আক্রমাত্মক প্রবণ হয়ে ওঠে সেজন্যে স্থানীয় বন বিভাগ ওইসব পাহাড়ে সাধারণ মানুষকে নির্বিঘ্নে প্রবেশে সতর্কতা জারি করেছে।এছাড়া জোরদার করেছেন বনে তাদের টহল কার্যক্রম।
সম্প্রতি ওই পাহাড়ে একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ভালুকটি ভয়ে একটি ইউক্লিপটর গাছে আশ্রয় দিলে সেই গাছে ভালুকের পায়ের আচরের চিহ্ন দৃষ্টিগোছর হয়েছে।প্রতিবেদকের কাছে গাছে ভালুকে পায়ের আচরের চিহ্নের কয়েকটি ছবিও রয়েছে।
ওই তেলমাছড়া বনের বনরক্ষক সাদেকুর রহমান জানান,বাচ্চাসহ ভালুক তেলমাছড়া ও সালটিলায় বিচরণ করছে। আমরা খুব সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করছি।কখনো কখনো এসব সাতছড়িতেও ফেরত যাচ্ছে।(ভিডিও:৫০ সেকেন্ড)
বিষয়টি নিয়ে তেলমাছড়ার বিট কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান,অনেক পাহাড়ির লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে বাচ্চাসহ ভালুকটিকে দেখেছে।সম্প্রতি আমরা টুরিস্টদের পাহাড়ের প্রবেশ করতে সাবধানতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিচ্ছি।এছাড়া আমাদের টহল কার্যক্রমকেও জোরদার করেছি।(ভিডিও:৪০ সেকেন্ড)
হবিগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী বন্যপ্রাণী সংগঠন পাখি প্রেমিক সোসাইটি-র যুগ্ম আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ইদানীং ওইসব এলাকায় ভালুকসহ বন্যপ্রাণীদের পানি সংকট দেখা দিয়েছে।ভালুকের নিরাপত্তা ও বন জঙ্গলের পরিবেশকে সুনিশ্চিত করতে আমাদের এলাকার মাননীয় বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা রেজওয়ান হাসানসহ বন বিভাগের জোরালো পদক্ষেপ কামনা করছি।(ভিডিও:২১ সেকেন্ড:এই ভিডিও বক্তব্যটি থাকা আবশ্যক)
বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, উপমহাদেশে ভালুকের ৪ প্রজাতি ছিল। এরমধ্যে ৩টি প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যেত। তবে একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার বর্তমানে ভালুকের যে দুটি প্রজাতির দেখা মেলে, সে দুটিই মহাবিপন্ন। এশিয়ান কালো ভালুক (Asian black bear) এর মধ্যে একটি।
তিনি বলেন, এই ভালুকের বুকে ইংরেজি ‘ভি (V)’ বর্ণের মতো বুকে সাদা দাগ থাকে যা দেখতে অনেকটা অর্ধেক চাঁদের আকৃতির মতো লাগে। এ কারণে ভালুকটি চাঁদ ভালুক নামেও পরিচিত। ভালুকের এই প্রজাতিটি মাংসভুক গোত্রের হলেও কীটপতঙ্গ, ফলমূল ও মধু খায়। মা ও শাবক ছাড়া বাকি সব ভালুকই একা চলাফেরা করে, খাবারের খোঁজে দিনরাত সমানভাবে বনময় ঘুরে বেড়ায়। গাছে চড়ার ব্যাপারেও এরা ওস্তাদ। এই ভালুক সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করে না। তবে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে শিকারি বা শত্রুকে অনেক সময় ভয় দেখায়।
আরওপড়ুন ….মাধবপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ গ্রেফতার -২, বিএনপির আনন্দ মিছিল।
মাধবপুরের তেলমাছড়ার বনে এশীয় ভালুকের উপস্থিতিকে সুখবর বলে বর্ণনা করেন জোহরা মিলা। তিনি বলেন, এক সময় দেশের পার্বত্য অঞ্চল বিশেষ করে সিলেট-চট্টগ্রামের মিশ্র চিরসবুজ পাহাড়ি বনের গহীন অরণ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভালুকের বাস ছিল। কিন্তু বাসস্থান ধ্বংস, খাদ্যের অভাব, বনে অনুপ্রবেশ ও শিকার এবং পাচারের কারণে প্রাণীটি বিলুপ্ত হতে বসেছে। যদিও গহীন বনে কিছু ভালুক এখনও টিকে আছে। তবে সেটিও অস্তিত্বের সঙ্গে লড়াই করছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
Subscribe to get the latest posts sent to your email.