
ক্রাইমসিন সংবাদ:
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় সোনাই নদী এখন অবৈধ সিলিকা বালি উত্তোলনের খনিতে পরিণত হয়েছে। চৌমুহনী ইউনিয়নের নদীপাড়জুড়ে দিন-রাত চলছে কোটি টাকার সিলিকা বালি লুটপাট। খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, উপজেলা প্রশাসন কিংবা ভূমি অফিস—কোনো সংস্থার অনুমতি না থাকলেও সিন্ডিকেটের বালু তোলার মহোৎসব থেমে নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, সব দেখেও প্রশাসন নীরব ভূমিকায় থাকায় প্রভাবশালী একটি চক্র কমিশন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

চৌমুহনী ইউনিয়নের আলাবক্সপুর, মঙ্গলপুর, অলিপুর, মহব্বতপুর ও হরিণখোলা এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায় অন্তত ১৮–২০টি বিশাল বালুস্তূপ। এসব স্তূপে মজুদ রয়েছে প্রায় ২–৩ লাখ ঘনফুট সিলিকা বালি। বাজারদর অনুযায়ী যার মূল্য ১.৫–২ কোটি টাকা। স্থানীয়দের দাবি, ইতোমধ্যে প্রায় লাখ খানেক ঘনফুট বালি পাচার হয়ে গেছে—যার বাজারমূল্য এক কোটি টাকার বেশি। কিন্তু এসব বালি জব্দ, তালিকা প্রস্তুত বা খনিজ মন্ত্রণালয়ে তথ্য পাঠানোর কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর।
নিয়ম অনুযায়ী নদী থেকে উত্তোলিত বালি সম্পর্কে ভূমি অফিস বা উপজেলা প্রশাসনের খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে—স্থানীয় কিছু কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে বিষয়টি গোপন করে রাখছেন। ফলে সরকারি কোষাগার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব, আর সিন্ডিকেটের পকেট ভরছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মিয়া জানান, তিনি বালি জব্দ ও নিলামের জন্য খনিজ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। তবে এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তার দাবি—প্রশাসনের নীরবতার আড়ালেই সক্রিয় রয়েছে প্রভাবশালী একটি বালু সিন্ডিকেট।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা সোহেল মাহমুদ বলেন, “সরকারের কোটি টাকা রাজস্ব লোপাট হচ্ছে। অথচ উপজেলা প্রশাসন সব জেনেও অজুহাত দিচ্ছে। দ্রুত এসব বালু জব্দ করে নিলামে দিলে সরকার বিপুল রাজস্ব পেত। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়েছে।”

স্থানীয়রা জানান, এভাবে বালি লুটপাট চলতে থাকলে নদী ভাঙন, রাস্তা-ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে। তাই দ্রুত সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে বালুচোরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
মাধবপুরের এসিল্যান্ড মজিবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, “এসব সিলিকা বালি কি না, আমরা নিশ্চিত নই। তবে কেউ চুরি বা অবৈধভাবে বালি পাচার করলে তথ্য দিলে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সোনাই নদীর বালু লুটপাট বর্তমানে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন—কোটি টাকার সম্পদ লোপাট হলেও প্রশাসনের চোখ কেন বন্ধ?
Subscribe to get the latest posts sent to your email.