ক্রাইমসিন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন:
হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, যা দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বনভূমি হিসেবে পরিচিত, সেই উদ্যানেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে মূল্যবান গাছ কাটার মহোৎসব। সম্প্রতি এ ঘটনায় বনবিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।
গোপন অভিযানের আড়ালে গাছ পাচার
স্থানীয়দের অভিযোগ, গভীর রাতে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পুরাতন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। মূলত সেই সুযোগে সাতছড়ি উদ্যানের ভেতরে প্রবেশ করে কাঠ চোরচক্র মূল্যবান গাছ কেটে পাচার করত। যদিও পুরোপুরি রাস্তা বন্ধ করতে পারেনি, তবে নিয়মিতভাবেই উদ্যানে ও মহাসড়কের পাশ থেকে শতাধিক বছর পুরোনো গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে।
বনবিভাগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
এ পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনায় বনবিভাগ কোনো মামলা করেনি। বরং স্থানীয়দের দাবি, বনবিভাগের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় এই পাচার সিন্ডিকেট কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় বনরক্ষীরা নিজেরাই কাঠ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতা করে গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছেন।
সাংবাদিক মুজাহিদ মসি বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে—
রেঞ্জার মামুনুর রশীদ
জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট নূর মোহাম্মদ
ফরেস্টার ও বিট কর্মকর্তা মেহেদী হাসান
ফরেস্ট গার্ড সুমন বিশ্বাস
এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বিজ্ঞ আদালত মামলাটির তদন্তভার দিয়েছে পিবিআইকে। স্থানীয়রা মনে করছেন, এ বিশেষায়িত সংস্থা মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে কাঠ পাচার চক্রের প্রকৃত হোতাদের উন্মোচন করবে। একই সঙ্গে বনবিভাগের ভেতরে যারা জড়িত, তাদেরও বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হবে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান কেবল গাছের ভাণ্ডার নয়, এটি দেশের বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীরও নিরাপদ আশ্রয়স্থল। নিয়মিত গাছ কাটার ফলে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। এর ফলে বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। তারা মনে করছেন, অবিলম্বে গাছ চুরি বন্ধ না করলে এ উদ্যান তার অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাতছড়ি উদ্যানের ভেতরে ঢুকতে সাধারণ মানুষকে নানা বিধি-নিষেধ মানতে হয়। অথচ রাতের আঁধারে কাঠ চোররা নির্বিঘ্নে ট্রাক ভর্তি গাছ পাচার করে নিয়ে যায়। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চললেও কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ তারা দেখেননি।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে গাছ পাচারের ঘটনায় বনবিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিবেশ রক্ষার সংগ্রামে নতুন মোড় এনেছে। এখন দেখার বিষয়, পিবিআইয়ের তদন্তে সত্যিই কি বনমাফিয়ার সিন্ডিকেট উন্মোচিত হবে, নাকি মামলাটি অন্য অনেক ঘটনার মতো ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যাবে।
Subscribe to get the latest posts sent to your email.