নিজস্ব প্রতিবেদক,মাধবপুর হবিগঞ্জ :
হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলায় ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রির মাধ্যমে একটি প্রভাবশালী চক্র রাতারাতি কোটিপতিতে পরিণত হচ্ছে। জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে নেওয়ার ফলে একদিকে যেমন কৃষিজ উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ছে, অন্যদিকে পরিবেশ ও গ্রামীণ অবকাঠামোর ওপরও পড়ছে বিরূপ প্রভাব।
উপজেলার আন্দিউড়া ধর্মঘর, বহরা, চৌমুহনী আদাঐর জগদীশপুর ও ছাতিয়াইন ইউনিয়নে রাতের আঁধারে এক্সক্যাভেটর ও ট্রাক্টরের সাহায্যে ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ মাটি গোপনে ইটভাটা, জমি ভরাট ও উন্নয়ন প্রকল্পে সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব কার্যক্রমে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি জড়িত, যাদের প্রশাসনের নিরবতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
অল্প কিছু নগদ অর্থের লোভে দরিদ্র কৃষকরা নিজেদের ফসলি জমির উপরিভাগ বিক্রি করে দিচ্ছেন। অথচ এই মাটি চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জমির মাটি কেটে নেওয়ার ফলে সেখানে ভবিষ্যতে কোনো ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। অনেক জমি ৮ থেকে ১০ ফুট গভীর করে কেটে ফেলায় তা ছোট পুকুর বা ডোবার মতো হয়ে গেছে।
মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ভারী যানবাহনের কারণে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তাগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ট্রাক্টর চলাচলের ফলে অনেক রাস্তায় খানা-খন্দ তৈরি হয়েছে, যা যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে। তাছাড়া পরিবেশগত ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়ছে।
মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব সরকার জানান, “উর্বর ফসলি জমির মাটি কেটে নিলে শুধু জমি নয়, সামগ্রিকভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাটিতে থাকা জৈব পদার্থ ও পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়, ফলে ভবিষ্যতে ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়ে।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বারবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং মাঝে মাঝে নামমাত্র অভিযান চালিয়ে দায়সারা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে দুষ্টচক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
অবৈধ মাটি কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান
দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা
কৃষকদের সচেতন করতে প্রশিক্ষণ ও প্রচার
ফসলি জমির সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগকে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া
মাধবপুরে ফসলি জমির মাটি কেটে কোটিপতি হওয়ার প্রতিযোগিতা কৃষি ও পরিবেশ উভয়ের জন্যই বড় ধরনের হুমকি। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ হতে পারে। প্রশাসনের যথাযথ নজরদারি, জনসচেতনতা ও কৃষিজমির সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি।
Subscribe to get the latest posts sent to your email.