
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতাঃ
হবিগঞ্জের মাধবপুরে মাদক এখন হাতের নাগালে। ইয়াবা, ফেনসিডিল কিংবা গাঁজা—সবই মিলছে সহজেই। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা একাধিক খুচরা মাদক বিক্রয়কেন্দ্রের চিত্র। এসব স্পটে প্রকাশ্যেই চলছে মাদকের বেচাকেনা ও সেবন। রয়েছে দালাল ও প্রভাবশালীদের সরাসরি মদদ।
স্থানীয়দের মতে, মাদকসেবিদের এসব স্থানে যেতে বিশেষ কোনো কাঠখড় পোড়াতে হয় না। অধিকাংশ বিক্রয়কেন্দ্রেই রয়েছে নির্দিষ্ট দালাল, যারা মাদকসেবিদের মুখ চিনেই বুঝে নেয়—কে ‘ক্রেতা’, কে ‘বিপদ’। অপরিচিত কেউ গেলে, তাকে নিয়ে যেতে হয় পরিচিত সেবনকারীদের সঙ্গে। এভাবেই গড়ে উঠেছে একপ্রকার অভেদ্য নিরাপত্তা বলয়।
অভিযানে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ ব্যবসায় জড়িত রয়েছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাসহ সংশ্লিষ্ট মহলের কিছু অসাধু ব্যক্তি। তারা প্রশাসনকে মাসোহারা দিয়ে এসব কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে।
মাধবপুর পৌরসভা, বাঘাসুরা, শাহজাহানপুর, চৌমুহনী ও ধর্মঘর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অনুসন্ধানে দেখা গেছে ভয়াবহ বাস্তবতা।
পৌর এলাকার সেমকো সিএনজি পাম্পের পাশে আলী আকবরের বাড়িতে নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা।
বাঘাসুরা ইউনিয়নের শাহ্ সুলেমান ফতেহ গাজীর মাজার এলাকা গাঁজার ‘হটস্পট’। রঘুনন্দন পাহাড়ের চূড়ায় নিয়মিত বসছে গাঁজার আসর।
তেলিয়াপাড়া চা বাগানের স্মৃতিসৌধসংলগ্ন এলাকায় চন্দ্র পান তাঁতির বাড়িতে চলছে প্রকাশ্যে ফেনসিডিল ও ইয়াবা বিক্রি। এখানেই বসে এসব মাদক সেবনের ব্যবস্থাও রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, চন্দ্র পান নিয়মিত প্রশাসনকে মাসোহারা দিয়ে থাকেন। অভিযানের আগেই তার কাছে খবর পৌঁছে যায়। প্রতিদিন এখান থেকে ১৫০-২০০ বোতল ফেনসিডিল বিক্রি হয় বলে দাবি এলাকাবাসীর।
এছাড়া—
ধর্মঘর ইউনিয়নের আলী শাহ মাজারের কাছে রুবেল মিয়া ও জেবু মিয়ার বাড়ি,
সস্তামুরা গ্রামের আলাউদ্দীন এর বাড়ি,
চৌমুহনীর আরিচপুর গ্রামের মানিক মিয়ার বাড়িতেও—ফেনসিডিল ও ইয়াবার খুচরা বিক্রয় হচ্ছে প্রকাশ্যে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হবিগঞ্জ কার্যালয়ের পরিদর্শক কাজী হাবিবুর রহমান বলেন,
“মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। তবে চিহ্নিত এলাকা সম্পর্কে আরও তথ্য থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সায়েদুল হাসান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
স্থানীয়দের মতে, মাদকের শিকড় ইতোমধ্যেই প্রশাসন ও রাজনীতির ভেতর গভীরে প্রবেশ করেছে। একারণেই এই ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তারা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
শেষ কথা,
মাধবপুরে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার এখন আর গুজব নয়, বাস্তবতা। প্রশাসনের দায়িত্ব শুধু মুখে নয়, বাস্তবে পদক্ষেপ নেওয়া। না হলে পুরো একটি প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে এ নেশার আগুনে।
Subscribe to get the latest posts sent to your email.